খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ২০ মে, ২০২৪

Breaking News

  চলে গেলেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত বরেণ্য লেখক হোসেনউদ্দিন হোসেন
  কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং শুরুর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
  ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ : কাদের
আয় বেশী হাসানের, সম্পদ বাচ্চুর

তেরোখাদায় চেয়ারম্যান পদে দুই কোটিপতির লড়াই

একরামুল হোসেন লিপু

চেয়ারম্যান প্রার্থী দুই কোটিপতির জমজমাট নির্বাচনী লড়াই শুরু হয়েছে। একজন তিন বারের নির্বাচিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু। আর তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী উপজেলা নির্বাচনে প্রথমবারের মতো নির্বাচনী লড়াইয়ের মাঠে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসান মুসাল্লী।

সম্পদের দিক থেকে কেউ কারোর চেয়ে কম নয়। তবে হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চুর বাৎসরিক আয় কম হলেও সম্পদ বেশী। অন্যদিকে আবুল হাসান মুসাল্লীর বাৎসরিক আয় বেশী হলেও সম্পদ তার তুলনায় কিছুটা কম।

আবুল হাসান মুসাল্লীর বাৎসরিক আয় ৪৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। সম্পদের পরিমাণ আড়াই কোটি টাকার টাকার উর্ধ্বে। আর সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চুর বাৎসরিক আয় ১২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। নিজের এবং স্ত্রী’র মিলে তার সম্পদের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা।

সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চুঃ

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সাথে হলফনামার তথ্য অনুযায়ী সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চুর বছরে আয় ১২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে কৃষি খাত থেকে তার বছরে আয় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া থেকে আয় ৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, তার উপর নির্ভরশীলদের আয় ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। তার স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে হাতে নগদ ৪৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। ১২ লাখ টাকা মূল্যের একটি মাইক্রোবাস, ১২ ভরি স্বর্ণ, ১ টি পিস্তল ও ১টি বন্দুক যার মূল্য দেড় লাখ টাকা, স্ত্রীর কাছে নগদ রয়েছে ২৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা ও ২৫ ভরি স্বর্ণ। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৪ দশমিক ৫৫ একর জমি, নগরীর লবণচোরা এলাকায় ১ লাখ ৭৯ হাজার টাকা মূল্যের শূন্য দশমিক ৫ একর জমি, কেডিএ আবাসিক এলাকায় ৫৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা মূল্যের প্লট, নগরীর পশ্চিম টুটপাড়া এলাকায় ২ কোটি ৭১ লাখ টাকা মূল্যের ৬ তলা বাড়ি, স্ত্রীর নামে খুলনায় রয়েছে ১ দশমিক ৭৮ একর জমি ও রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে ৪৩ লাখ টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট। আইএফআইসি ব্যাংক তার ঋণ আছে ১২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা

আবুল হাসান মুসাল্লীঃ

হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আবুল হাসান মুসাল্লীর বছরে আয় ৪৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে কৃষি খাত থেকে তার বছরে আয় ১ লাখ ৮২ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া থেকে আয় ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে আয় ৩৭ লাখ ১৩ হাজার টাকা। তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ সাড়ে ৭ লাখ টাকা, ব্যাংকে ৪ লাখ ৮৭ হাজার টাকা, ২৫ লাখ টাকা মূল্যের গাড়ি, ২ লাখ টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিক সামগ্রী, ৩ লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র ও অন্যান্য সামগ্রী, স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৫০ লাখ টাকা মূল্যের ৫ একর জমি, ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা মূল্যের ২টি বাড়ি। আবুল হাসান মুসাল্লীর নামে কোন ঋণ কিংবা মামলা নেই।

জাতীয় পার্টির আমলে জাপা রাজনীতির মাধ্যমে শরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। জাতীয় পার্টির শাসনামলে তিনি প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি দ্বিতীয়বারের মতো উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সর্বশেষ গত উপজেলা নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ নেতা শেখ শহিদুল ইসলামের কাছে পরাজিত হয়। দীর্ঘ ৪৭ বছর ধরে সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু রাজনীতির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। ফেসবুকে দেওয়া তার এক ভিডিও বার্তায় শোনা যায়, এবারে তিনি নিয়ত করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারলে তিনি জান্নাত কামাই করবেন। নির্বাচিত হলে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানী করবেন আর জান্নাত কামাই করবেন।

২ মে প্রতীক পাওয়ার পর সর্বপ্রথম তিনি তার দোয়াত কলম প্রতীক সম্বলিত প্রথম লিফলেট বিতরণ করেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আবুল হাসান মুসল্লীর কাছে।

এদিকে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি আবুল হাসান মুসাল্লী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। নির্বাচনী প্রচারণা এসে তিনি নতুন প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চুর মতো তিনিও ২ মে তিনি তার নির্বাচনী প্রতীক আনারস পেয়ে সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চুকে সর্বপ্রথম তার প্রতীক আনারস মার্কায় ভোট প্রার্থনার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। আধুনিক, স্মার্ট দুর্নীতিমুক্ত মডেল তেরোখাদা উপজেলা গড়ার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে তিনি ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন।

এদিকে নির্বাচনের আর মাত্র ১০ দিন বাকী। ২১ মে ২য় ধাপে এ উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠীত হবে। নির্বাচনী প্রচারণা এখন তুঙ্গে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লাসহ ভোটারদের বাড়ি বাড়ি চষে বেড়াচ্ছেন। প্রচারণা চালাচ্ছেন উঠান বৈঠকের মাধ্যমে। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন সন্ত্রাসমুক্ত মডেল তেরোখাদা উপজেলা গড়ার। তেরখাদা উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় নির্বাচনে দুই প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হবে হান্ডাহাড্ডি। তবে লড়াই যাই হোক বিজয়ের ব্যাপারে দুই প্রার্থীই শতভাগ আশাবাদী।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!